চুলের যত্নে মেথি ও কালোজিরা ব্যবহার করার ১০টি উপকারিতা

চুলের যত্নে মেথি ও কালোজিরা ব্যবহার  খুবই উপকারী। তাই আপনাদের চুলের যত নেয়ার জন্য মেথি ও কালো জিরার ব্যবহার করতে পারেন। এই আর্টিকেল টিতে আলোচনা করা হবে আপনি আপনার চুলের যত্ন নেওয়ার জন্য মেথি ও কালোজিরা কিভাবে ব্যবহার করবেন সেই সম্পর্কে।

বর্তমানে এখন আমাদের চুলের নানা রকম সমস্যা দেখা দেয়। যেমন চুল ঝরে যাওয়া, মাথায় চুল না গজানো এরকম আরো নানা ধরনের সমস্যা রয়েছে। এ সকল সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আপনার চুলের যত্নে মেথি ও কালোজিরা ব্যবহার করতে পারবেন।

পেজ সূচিপত্রঃ চুলের যত্নে মেথি ও কালোজিরা ব্যবহার

চুলের যত্নে মেথি ও কালোজিরা ব্যবহার

চুলের যত্নে মেথি ও কালোজিরা ব্যবহার অনেক কার্যকরী। এই প্রাকৃতিক উপাদান গুলো প্রাচীনকাল থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে এবং অনেক জনপ্রিয়। মেথি ও কালোজিরা আপনার চুলকে স্বাস্থ্যজ্জ্বল, ও সিল্কি করে তুলতে অনেক সাহায্য করে। তাই আপনি যদি চান আপনার চুলের জন্য মেথি ও কালোজিরা ব্যবহার করতে পারেন। কারণ মেথি বিজে রয়েছে নিকোটিন এসিড, লেসিথিন যা আপনার চুলের বৃদ্ধি করতে, পুষ্টি জোগাতে এবং সংক্রমণের হাত থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করবে।  

মেথি ও কালোজিরা এই দুটো প্রাকৃতিক উপাদানে আপনাদের কাছে খুবই পরিচিত। এই উপাদান গুলো শুধু রান্নার কাজেই নয় এটি চুলের যত্নেও ব্যবহার করা হয় এবং অনেক কার্যকরী। যা আপনার চুলের রুক্ষতা দূর করে চুল পড়া কমাতে সাহায্য করবে এবং চুল লম্বা করে ও মাথার খুশকি দূর করতে অনেক সাহায্য করে থাকে।

চুলের যত্নে মেথির ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত

চুলের যত্নে মেথির ব্যবহার কিভাবে করবেন সেই সম্পর্কে এখন এই প্যারাতে বিস্তারিত আলোচনা করব। মেথির ব্যবহার বিভিন্ন রকম ভাবে করা যায়। প্রথমে আপনি ২ টেবিল চামচ মেথি নিয়ে একটি বাটিতে সারা রাত ভিজিয়ে রাখবেন। এবং সকাল বেলায় ভেজানো মেয়েটি ভালোভাবে ছেঁকে নিন এবং একটি স্প্রে বোতলে ভরে আপনি আপনার চুলে স্প্রে করুন। এবং এটি আধাঘন্টা থেকে এক ঘন্টা পর এমনি স্বাভাবিক পানি দিয়েই ধুয়ে ফেলুন। এতে আপনার চুল অনেক মসৃণ হবে ও চুল পড়া কমাবে।

এছাড়া আপনি আপনার চুলের যত্নের জন্য মেথির তেল ঘরোয়া ভাবে প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি করে ব্যবহার করতে পারবেন। যা আপনার চুলের জন্য আকারই হবে। মেথির তেল তৈরি করার জন্য প্রথমেই আপনাকে আড়াইশো থেকে ৫০০ গ্রাম পর্যন্ত নারিকেল তেল অথবা অলিভ অয়েল তেল নিতে হবে। এরপর এক টেবিল চামচ কালোজিরা, 2 টেবিল চামচ মেথি ও অ্যালোভেরা একসঙ্গে পেস্ট করে তেলের সঙ্গে মিশিয়ে নিয়ে এটি অল্প আচে জাল দিয়ে নিতে হবে।

এটি ভালোভাবে জাল দেয়া হয়ে গেলে ঠান্ডা করে নিতে হবে। ভালোভাবে ঠান্ডা করে নেওয়ার পর ছাকনা দিয়ে ছেঁকে নিতে হবে। এই তিনটি ভালোভাবে ছেঁকে নেওয়ার পর একটি কাঁচের যারে রেখে দিতে পারেন। এবং আপনি যখন ব্যবহার করবেন তখন একটি পাত্রে পানি নিয়ে ফুটিয়ে তার ওপর বাটিতে তেল দিয়ে গরম করে নিতে পারেন। এবং এই তেলটি আপনি সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার ব্যবহার করবেন। 

চুলের যত্নের জন্য মেথি ব্যবহারের উপকারিতা

চুলের যত্নের জন্য মেথি ব্যবহারের উপকারিতা অনেক রয়েছে। মেথি ব্যবহারের ফলে আপনার চুলে খুশকি দূর করতে সাহায্য করবে। এছাড়া আপনার চুল বৃদ্ধিতে ও চুল পড়া কমাতে সাহায্য করবে। মেথি বীজের আরেকটি নাম রয়েছে। এর আরেকটি নাম হল ফেনুগ্রিড সিড। চুল পড়ে যাওয়ার সমস্যার সমাধানে আপনি এর একটি ঘরোয়া বা প্রাকৃতিক উপায়ে তেল বানিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।

এই তেল বানিয়ে নিয়মিত যদি ব্যবহার করেন তাহলে আপনার চুল পরে যাওয়ার সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। চুল হচ্ছে আমাদের সৌন্দর্যের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। বিশেষ করে মেয়েরা চুল পড়ে যাওয়া নিয়ে বেশি চিন্তিত থাকে। তাই আপনাদের এই সমস্যা সমাধানের জন্য নিম্নে নিয়ম অনুযায়ী তেল তৈরি করে ব্যবহার করতে পারেন।

এটেল বানানোর জন্য যেসব উপকরণ গুলো নিতে হবে সেগুলো নিম্নে দেয়া হলো

  1. দুই টেবিল চামচ মেথি
  2. ২ টেবিল চামচ কালোজিরা
  3. ৮ টি আমলকি
  4. পনেরো বিশটি লবঙ্গ
  5. ২ টেবিল চামচ কারি পাতা
এই সকল প্রাকৃতিক উপাদান গুলো একসঙ্গে নিয়ে পেস্ট করে নিতে হবে। পেস্ট করা হয়ে গেলে এর সাথে দেড় থেকে ২ লিটার নারিকেল তেল দিয়ে একসঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে এটি হালকা আছে থেকে ৪০ মিনিট জাল দিতে হবে। এবং জাল দেয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে এটি যেন নিচে লেগে কিংবা পুড়ে না যায়। ভালোভাবে জাল দেয়া হয়ে গেলে এটি ভালো করে আবার মিশিয়ে ছেকে ছেকে নিয়ে একটি কাঁচের বোতলে সংরক্ষণ করতে পারেন। 

এটি বাইরে সংরক্ষণ করা যাবে দুই থেকে তিন মাস। এবং এটি ব্যবহারের সময় একটি স্টিলের বাটিতে তেল নিয়ে গরম পানির উপরে রেখে এটি হালকা কুসুম গরম করে নিতে হবে। এবং এই কুসুম গরম তেল আপনি আপনার মাথায় ব্যবহার করলে চুল পড়া বন্ধ ও চুল দ্রুত বৃদ্ধি হবে এবং চুলের খুশকি দূর হবে। 

প্রাকৃতিক উপায়ে চুলের যত্ন

প্রাকৃতিক উপায়ে চুলের যত্ন নেওয়া আমাদের জন্য সবথেকে বেশি উপকারী। কারণ প্রাকৃতিক উপায়ে চুলের যত্ন নিলে আমাদের চুল অনেক ভালো থাকে এবং দীর্ঘমেয়াদি হয়। আপনারা চুলের যত্ন নেওয়ার জন্য অনেকে বাইরে থেকে বিভিন্ন কেমিক্যাল যুক্ত তেল কিংবা হেয়ার প্যাক ব্যবহার করে থাকেন। যা ব্যবহারে আপনাদের চুলের নানা ধরনের ক্ষতি করে থাকে। আবার কোন সময় যদি উপকৃত হন তাহলে সেটি ক্ষণস্থায়ী হয়। 

এই প্রোডাক্ট ব্যবহারে এমন হতে পারে যে আপনি ব্যবহার করবেন ততদিন আপনার চুল ভালো থাকবে আবার ব্যবহার বন্ধ করে দিলে আপনার চুলের আবার নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিবে। তাই দীর্ঘমেয়াদি চুলের উজ্জ্বলতা ও চুল বৃদ্ধি, চুল ঝরে না পড়া এই সকল সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে প্রাকৃতিক উপাদান আমাদের চুলের জন্য খুবই ভালো। এজন্য আপনি আপনার চুলের যত্নে মেথি ও কালোজিরা ব্যবহার করতে পারেন।

প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে যদি আপনারা হেয়ার প্যাক বানিয়ে মাথায় ব্যবহার করেন তাহলে আপনার সকল সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। যেমন চার টেবিল চামচ টক দই, এক টেবিল চামচ মেথির গুঁড়ো, এক টেবিল চামচ ত্রিফলার গুড়ো এবং একটি ডিম এই সকল উপকরণগুলো একসঙ্গে মিক্স করে একটি পেস্ট তৈরি করুন। এবং এই পেস্ট আপনার চুলে ব্যবহার করুন এটি ব্যবহারের আধা ঘন্টা থেকে ৪০ মিনিট পর শ্যাম্পু করে ফেলুন।

চুলের যত্নে কালোজিরা ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত

চুলের যত্নে কালোজিরা ব্যবহার অনেক উপকারী। কালোজিরা কে তো বলা হয় সব রোগের মহা ঔষধ শুধুমাত্র মৃত্যু বাদে। কালোজিরা শুধু ত্বকের জন্য উপকারী নয় এটি আপনাদের চুলের জন্য অনেক উপকারী। এই কালোজিরার আপনাদের চুলের বিভিন্ন রকমের পুষ্টি ও নানা ধরনের প্রয়োজনীয় অভাব পূরণ করতে অনেক সাহায্য করে।

এছাড়াওআপনি আপনার চুলের যত্নে কালোজিরা তেল ব্যবহার করতে পারেন। আপনি চাইলে কালোজিরা কিনে নিয়ে ভাঙিয়ে তেল করে নিতে পারেন অথবা দোকান থেকে কালোজিরা তেল কিনে নিতে পারেন। এছাড়াও আপনি কালোজিরার তেল বানানোর জন্য প্রথমে ২৫০ গ্রাম নারিকেলের তেল নিন এবং এতে চার চামচ কালোজিরা গুড়া ও চার চামচ মেথির গুঁড়ো মিশিয়ে নিন।

কালোজিরা ও মেথির গুঁড়া নারিকেল তেলের সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে নেওয়ার পর এটি কাচের বোতলে সংরক্ষণ করুন। এবং একটি পাত্রে পানি ভালোভাবে ফুটিয়ে নিন এবং ফুটন্ত পানিতে এর তেলের বোতলটি ছেড়ে দিন এবং এটি ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর্যন্ত গরম পানির ভেতরে রেখে দিন এরপর এই তেলটি আপনি করা রোদ্রে পাঁচ থেকে ছয় দিন দিবেন। এতে করে আপনার চুল অনেক সুন্দর লম্বা ঘন কালো হবে।

চুল লম্বা করার জন্য মেথি ও পেঁয়াজের রস ব্যবহার

চুল লম্বা করার জন্য মেথি ও পেঁয়াজের রস ব্যবহার খুবই উপকারী। মেথি ও পেঁয়াজের রস এই দুটোই প্রাকৃতিক উপাদান ও এই দুটোর মিশ্রণ খুব কার্যকরী। আপনি যদি সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন মেথিও পেঁয়াজের রস ব্যবহার করতে পারেন আপনার চুল অনেক ভালো থাকবে। মেথিতে রয়েছে প্রোটিন ও নিকোটিন অ্যাসিড যা আপনার চুলের গোড়া মজবুত ও শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে

অন্যদিকে পেঁয়াজের রসে রয়েছে সালফার যা চুলের স্কাল্পে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে ও আপনার মাথায় নতুন চুল গজাতে সাহায্য করবে। এই দুটি উপকরণ এর মিশ্রণ চুলের বৃদ্ধিতে অনেক ভূমিকা পালন করে। এই মিশ্রণটি তৈরি করার জন্য প্রথমে তিন টেবিল চামচ মেথি সারারাত ভিজিয়ে রেখে দিন। এরপর এটি ব্যবহারের আগে একটি ব্লেন্ডারের ভেজানো মেথি ব্লেন্ড করে নিন। 

এবং দুইটি পেঁয়াজ ব্লেন্ডার করে এটি থেকে রস আলাদা করে নিন, এই মেথির পেস্টের সঙ্গে পেঁয়াজের রস একসঙ্গে মিশিয়ে নিন এবার এটি আপনার।  এই মেথি ও পেঁয়াজের পেস্ট আপনার মাথার স্কেলবে ও পুরো চুলে দিয়ে নিন। এই পেস্ট দেয়ার পরে 30 থেকে 40 মিনিট পর শ্যাম্পু করে নিন। এরপর চাইলে আপনি কন্ডিশনার ব্যবহার করতে পারেন। 

মেথি ও লেবুর রস কতটুকু কার্যকারী 

মেথি লেবুর রস নানা ধরনের সংক্রমণ দূর করতে সাহায্য করে থাকে। সাধারণত ফাঙ্গাস ইনফেকশন থেকে মাথা সংক্রমণ সৃষ্টি হয় এছাড়াও যেমন ডার্মাটাইটিস ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ এলার্জি কারণে হতে পারে। আর এই সকল ধরনের সংক্রমণর হাত থেকে মুক্তি দিতে পারবে মেথি ও লেবুর রস, কারণ এর মধ্যে রয়েছে প্রাকৃতিক এন্টি ফাঙ্গাল আরো রয়েছে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল এর গুন। 

আপনার যদি সংক্রমণ প্রবণ মাথার তোকে হয়ে থাকে তাহলে এটি আপনার জন্য অনেক উপকারী। এই দুটি উপকরণের পেস্ট আপনার চুলের পোস্টটি যোগান দিবে ও আদ্রতা ধরে রাখবে। এই মিশ্রণটি আপনার চুলের গোড়ায় গোড়ায় ভালো করে ব্যবহার করুন যাতে মিশ্রণটি ত্বকে অনেক ভালো করে কাজ করতে পারে। এরপর এটি আধা ঘন্টা থেকে 40 মিনিট পর্যন্ত রেখে দিন। ৪০ মিনিট পার হলে এটি ভালোভাবে ধুয়ে নিন তাছাড়া আপনি চাইলে শ্যাম্পু করতেও পারেন।

লেখকের মন্তব্যঃ চুলের যত্নে মেথি ও কালোজিরা ব্যবহার 

চুলের যত্নে মেথি ও কালোজিরা ব্যবহার সম্পর্কে এতক্ষণে আপনারা নিশ্চয়ই বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। তাই আপনার চুলের যদি কোন সমস্যা থাকে তাহলে আপনি ওপরের বিষয়গুলো ভালোভাবে পড়ে আপনি এপ্লাই করতে পারেন। এতে করে আপনি উপকৃত হবেন। আর যদি উপরের বিষয়গুলো না পড়ে সরাসরি এখানে আসেন তাহলে কিছুই বুঝতে পারবেন না। 

তাই আমার পরামর্শ থাকবে যে প্রথমে আপনি পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন তাহলে আপনি সবকিছু বিস্তারিত জানতে পারবেন। আর পরে আপনি উপকৃত হলে আপনার বন্ধুদের কাছে এই আর্টিকেলটি শেয়ার করে দিবেন। আজকে এখানেই শেষ করছি সবাই ভালো থাকবেন। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ঊর্মি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url